বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

মনের রং ...

কানের সামনে সারাক্ষন চোস্ত ইংরেজি’ শুনতে শুনতে কান কেমন জানি অবস অবস লাগে; দেশ ছাড়ার তিন বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও – এখনও নিজেকে পুরোপুরি অভ্যস্ত করে তুলতে পারি নাই। দেখা যাক আর কতদিন লাগে এই অনভ্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে। মনে আছে দেশ ছাড়ার সময় মায়ের ভিজে উঠা চোখে একমাত্র ছেলেকে দূরে চলে যাওয়া রোধ করতে না পারার আকুতি; আর বাবার বরাবরের মতোই অভিব্যক্তি লুকানোর করূন চেষ্টা – এ দুটো অভিব্যক্তি বা আবেগায়িত প্রকাশের সাথে আমি কখনই নিজেকে সামলাতে পারিনাই। আর তাই কেন জানি মনে হয়, কিছু জিনিষের সাথে অভ্যস্ততার বা নিজেকে মিশিয়ে ফেলার কোন প্রয়োজন নাই – প্রয়োজন নাই খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠার মন না চাওয়া পরিবেশের সাথে। যদিও অনেকেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে ফেলে সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রতি; ভুলে যাওয়ার মিথ্যে অভিনয় করে – কতটা বদলে গেলে নিজেকে রুপক সমাসের মধ্যে পুরোপুরি ফেলে দিতে পারে – সেই চেষ্টা। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা, বড্ড নিষ্ঠুর; দেশ ফেলে আসা পরবাসী মানুষদের পুরোপুরি পাল্টাতে দেয় না – তাই হয়তো অনেকেরই শেষ যাত্রাটা হয় দেশের পানেই।

অস্ট্রেলিয়ায় এসে যে রংটা আমার বেশি চোখে পড়েছে – হয় সাদা না হয় কালো; আমার নতুন অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বড় বড় দালানগুলার রং-বন্ধন হলো সাদা আর কালো; বাসে-ট্রেনে-ট্রামে উঠলে মানুষের পোশাকে কালো-সাদার আধিক্য অনেক ক্ষেত্রে বাহুল্যও বলা যেতে পারে; আর বৃষ্টির দিনে বড় বড় কালো ছাতাতো আছেই ...। যাই হোক কালো-সাদার কথা বললাম কারন, ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাসের আগে এখানে কড়কড়ে লালটা আর বাকি সব রংকে হারিয়ে দেয় – রাস্তার উপর লাল রঙ্গের তোড়ন, দোকানে-রাস্তায়-এমনকি মানুষের পোষাকেও লাল রঙ্গের ছোয়া, সব রকমের বিজ্ঞাপনে লালটাই আসল ব্যাকগ্রাউন্ড কালার। কিন্তু এতো কিছুর পরও আমার ভিতর ডিসেম্বর মানে সবুজ আর কিছুটা লাল। ডিসেম্বর আসলেই লাল-সবুজ টাকে বেশি করে মনে হয় যেন – “মনের ভিতরের রং, ভালবাসার রং, মায়ার রং, অনুভবের রং, স্বপ্নের রং”।

মানুষ বার বার জন্ম নেয় না – একবার জন্ম নেয়, একটা মাত্র মাতৃভূমি পায়, একবারই কেবল ভালবাসতে শেখে মাতৃভূমির পতাকার রং ... বিজয়ের মাসে আপন দেশের প্রতি ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সবার - সবখানে, সবক্ষনে।।      

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

এলার্জি (দাড়ি। কমা, প্রশ্নবোধক?)


“প্রথমেই, ইহা একান্তই নিজস্ব এলার্জি বিষয়ক পোস্ট, কাঊকে কোনপ্রকারে আঘাত করিয়া থাকিলে দুঃখিত”
===============================================================

এলার্জি-১
ট্রেনে বাসায় যাচ্ছি, সামনে এক চুমাখাপো এক ভারতীয় গলা ফাটাইয়া ঘ্যান ঘ্যান করতেছে; এই দেশের মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি মোটামুটি সবসময় শুন্যের কোঠায় থাকে। সারা ট্রেনের মানুষ ব্যাপক বিরক্ত ব্যাটার উপর; আমারি মনে হইতেছে উইঠা গিয়া লাথি মারি।

এলার্জি-২
মেলবোর্নে চাইনীজ এত্তো বেশি দেখা যায় যে মাঝে মাঝে মনে হয় আমি চাঙ্কু দেশে থাকি; এদের ব্যবহার বাসে ট্রেনে শান্তই থাকে (দু-একটা বাদে); এরা ভারতীয়দের মতো কমন সেন্সে এতো ভোতা না।

এলার্জি-৩
প্রথম দিকে ভাবতাম সব সাদা মানেই অজি যদিও এইখানে থাকতে থাকতে সবাই অজি হয় (বাঙালি বাদে)। বাঙ্গালির ব্যাপক সমস্যা এইখানে এরা এই ব্যাপারে আধাআধি (অন্য সময় লিখব অস্ট্রেলিয়ায় বাঙ্গালীর কথা, এখন না); যাই হোক সাত রকমের সাদা মানু্ষের ব্যবহারও সাতশ রকমের। এদের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে মনের ভেতর এদের কি চলে - কেউ মন ভার করেও সারাদিন মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে দিন পার করে, কথায় কথায় বলে ভাল আছি, আর বেশি মেজাজ খারাপ থাকলে শুধুমাত্র বলে ‘not bad’; এরা মনের কথা মনে তালা মেরে রাখতে বড়ই ওস্তাদ।

এলার্জি-৪
এই খানে পিচ্চি পিচ্চি দুধের বাচ্চাদের ডে কেয়ারে বাবা-মাদের ফেলে যাওয়ার মতো হৃদয় বিদারক কাজ মনে হয় আর দ্বিতীয়টি নাই। ডে কেয়ারে বাচ্চারা ঠান্ডায় ফ্লোরে পড়ে থাকে, নির্দিষ্ট পরিমান খাওয়া ভাগ করে খেতে শিখে, ভরা রোদে পুড়তে পুড়তে খেলা শিখে – এগুলো যে খারাপ তা না, কিন্তু আমার অস্বস্তি লাগে যখন ভাবি কি হয় নিজের দেশের মতো সব মা’রা সকাল বেলায় আদর করে বাচ্চাকে খাইয়ে দেবে, নিষেধ করবে ভরা রোদে না যাওয়ার, ছোট বাচ্চার শৈশব পাবে সারাটাক্ষন মায়ের ছায়াতল। 


শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩

আত্নকথন (গ্রীষ্ম)

খুব গরম এখন মেলবোর্নে, গরম লু হাওয়ায় যেন সবকিছু তিরতির করে কাঁপছে। এখানকার মানুষজন সাধারনত গ্রীষ্মকালটা উপভোগ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তারাও যেন এবার এই কাঠফাঁটা গরমে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো তড়পাচ্ছে। ভেবেছিলাম ক্রিসমাসের ছুটিতে দূরে কোথাও টো টো করে বেড়াব, কিন্তু সেটাও হলো না - কারন রোদের খরতাপে একটু বেরোলেই চামড়া পুড়ে একশা, নিজেকে তখন বার-বি-কিউ মুরগি ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। আমার মাথা ব্যাথার হালকা সমস্যা আছে, বেশি গরমে মাথায় ঝিন ঝিন ব্যাথা করে – রুমটা অন্ধকার করে চুপচাপ শুয়ে থাকতে হয়।  তখন এইরকম একটা গান শুনলে ভাল লাগে -