লুকোচুরি ...
"এ জীবন যেন নিজের সাথে লুকোচুরি ছাড়া আর কিছুই নয়"
সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আত্নকথন - বাবা-দিবস ২০২১
শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১
আত্ন-কথন - শুন্যতা
শুন্যতা মানে ফাঁকা, অথবা থেকেও নেই। আমাদের চারপাশের সব আছের ভিতরে যখন কিছু হারিয়ে যায়, ঠিক তখনকার অব্যাক্ত অনুভূতিই শূন্যতা। আমরা ছোট্টকালে শূন্য লিখতে শিখি, কিন্তু এই শুন্যের ভেতর জীবনের কত শত শূন্যস্থান আছে তা আত্বস্থ করতে পারি না। জীবনের সবচেয়ে ব্যাপক শূন্যস্থান কোথায়? – মহাশূন্যে নাকি মনে নাকি আত্নায়? আমাদের সবার জন্ম ভালবাসায়, আমরা বড় হই নানা রকম ভালবাসার প্রবাহে, আর সেই সাথে আকড়ে ধরি জীবনের মানুষদের। যখন কোন এক জটিল ক্ষণে যদি এই জীবন-চলনে ব্যাঘাত ঘটে – তবেই কি আমরা শূন্যতা অনুভব করি না?
ছোট্টবেলায় একবার পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম, মেঘনা নদীর ঘোলা পানিতে – ঠিক সে মুহূর্তটা আমার এখনো মনে আছে, তলিয়ে যাচ্ছি কোন এক শুন্যতায়। সে শুন্য ক্ষন আমাকে এখনও মাঝে সাঝে গ্রাস করে।
আমার বাবা শক্ত মনের প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন; দেশ ছেড়ে যখন বিঁভূইয়ে যাত্রা ক্ষনের আগে এয়ারপোর্টে সেই বাবার চোখ মুছতে দেখার সময়টাতে - আমার মধ্যে অজানা শূন্যতা তৈরী করেছিল। মন বলছিল কেন অযথাই শুন্যতা তৈরী করছিস ছেড়ে চলে অচেনা গন্তব্যে; কিন্তু শূন্যস্থান তৈরীতে ছেদ ঘটাতে পারি নাই।
সিডনি এয়ারপোর্টে প্রথমবারের মতো যখন বিদায় জানালাম দেড় বছড়ের ছেলে ও স্ত্রীকে কয়েক মাসের জন্য – সে সময়টাতেও এলোমেলো শুন্যতায় বুকে হাহাকার উঠেছিল। মনে হয়েছিল আমি শূন্য হয়ে গেছি, আমার সব থেকেও কিছুই নাই।
এই শুন্যতা তৈরীর বছর ২০২০ এ, এই এক জীবনের সবচেয়ে ভিতরের মানুষ আমার আব্বাকে হারানোর রাতে বুকের ভিতরটায় এক ভীষণ কষ্টে ‘থমকে-যাওয়া’ শুন্যতায় আটকে গেছি। এই শূন্যতা আমাকে সারাজীবনের শুন্যস্থান করে দিয়েছে। ভালবাসা-ভরসা-আশ্রয় সব যেন কেড়ে নিয়েছে। আব্বার রুহটা যখন দেহ ছাড়ল, মনে হচ্ছিল আব্বা যেন হাসছে – ভালবাসার প্রাঞ্জল হাসি। আব্বা আমাদের এক বিশাল ভালবাসার শূন্যস্থান দিয়ে চলে গেলেন অজানায়।
ছেলেবেলায় দেখেছি আমার দাদার অসাধারণ হাতের লেখায় একটা খাতা – যেখানে আছে যোগাসন, দোয়া, নীতি কথা, পরিবারের গাছ। আমার কাছে রাখতাম খাতাটা, ভাল লাগতো। মনে হতো দাদাকে দেখি নাই কিন্তু তার হাতের লেখায় তার গোছানে জীবনাচারনের একটা প্রচ্ছায়া পেলাম। বড় হয়ে দেখলাম আব্বাও একই ভাবে ডায়েরীতে লিখে রাখে অনেক কিছু, পরিবারেরে যোগসূত্র, ঔষধের নাম, ফোন নাম্বার, দরকারী কাজ ইত্যাদি। দাদা-আব্বা-আমি-আমার ছেলেরা একটা পরিবারের গাছের শাখা। গাছের ডালের শক্ত প্রান্তটা যেমন মূল গাছের সাথে থাকে, আমার দাদা-বাবারাও তাই – শক্ত করে আমাদের ধরে আছে যাতে আমরা শূন্যতায় হারিয়ে না যাই।
#আত্নকথন #শুন্যতা