কানের সামনে সারাক্ষন চোস্ত ইংরেজি’ শুনতে শুনতে
কান কেমন জানি অবস অবস লাগে; দেশ ছাড়ার তিন বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও – এখনও নিজেকে
পুরোপুরি অভ্যস্ত করে তুলতে পারি নাই। দেখা যাক আর কতদিন লাগে এই অনভ্যস্ততা
কাটিয়ে উঠতে। মনে আছে দেশ ছাড়ার সময় মায়ের ভিজে উঠা চোখে একমাত্র ছেলেকে দূরে চলে
যাওয়া রোধ করতে না পারার আকুতি; আর বাবার বরাবরের মতোই অভিব্যক্তি লুকানোর করূন চেষ্টা
– এ দুটো অভিব্যক্তি বা আবেগায়িত প্রকাশের সাথে আমি কখনই নিজেকে সামলাতে পারিনাই।
আর তাই কেন জানি মনে হয়, কিছু জিনিষের সাথে অভ্যস্ততার বা নিজেকে মিশিয়ে ফেলার কোন
প্রয়োজন নাই – প্রয়োজন নাই খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠার মন না চাওয়া পরিবেশের
সাথে। যদিও অনেকেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে ফেলে সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রতি; ভুলে
যাওয়ার মিথ্যে অভিনয় করে – কতটা বদলে গেলে নিজেকে রুপক সমাসের মধ্যে পুরোপুরি ফেলে
দিতে পারে – সেই চেষ্টা। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা, বড্ড নিষ্ঠুর; দেশ ফেলে আসা পরবাসী
মানুষদের পুরোপুরি পাল্টাতে দেয় না – তাই হয়তো অনেকেরই শেষ যাত্রাটা হয় দেশের
পানেই।
অস্ট্রেলিয়ায় এসে যে রংটা আমার বেশি চোখে পড়েছে –
হয় সাদা না হয় কালো; আমার নতুন অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বড় বড় দালানগুলার
রং-বন্ধন হলো সাদা আর কালো; বাসে-ট্রেনে-ট্রামে উঠলে মানুষের পোশাকে কালো-সাদার
আধিক্য অনেক ক্ষেত্রে বাহুল্যও বলা যেতে পারে; আর বৃষ্টির দিনে বড় বড় কালো ছাতাতো
আছেই ...। যাই হোক কালো-সাদার কথা বললাম কারন, ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাসের আগে এখানে
কড়কড়ে লালটা আর বাকি সব রংকে হারিয়ে দেয় – রাস্তার উপর লাল রঙ্গের তোড়ন,
দোকানে-রাস্তায়-এমনকি মানুষের পোষাকেও লাল রঙ্গের ছোয়া, সব রকমের বিজ্ঞাপনে লালটাই
আসল ব্যাকগ্রাউন্ড কালার। কিন্তু এতো কিছুর পরও আমার ভিতর ডিসেম্বর মানে সবুজ আর
কিছুটা লাল। ডিসেম্বর আসলেই লাল-সবুজ টাকে বেশি করে মনে হয় যেন – “মনের ভিতরের রং,
ভালবাসার রং, মায়ার রং, অনুভবের রং, স্বপ্নের রং”।
মানুষ বার বার জন্ম নেয় না – একবার জন্ম নেয়,
একটা মাত্র মাতৃভূমি পায়, একবারই কেবল ভালবাসতে শেখে মাতৃভূমির পতাকার রং ...
বিজয়ের মাসে আপন দেশের প্রতি ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সবার - সবখানে, সবক্ষনে।।