শীতকাল আমার
ভাল লাগে না, বাংলাদেশে থাকলে ভাল লাগত শরৎ আর হেমন্তকাল অথবা বৃষ্টির দিনে বারান্দায়
বসে সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ঝমঝমানি দেখা। শীতকালটাকে আমার অনেকটা বিয়োগান্তক লাগে –
পাতা ঝরে যায়, ঠান্ডা হিম হিম বাতাস, গায়ে জড়াতে হয় মোটা মোটা কাপড় – খালি মনে হয়
কোথায় যাই! এখানকার (মেল্বোর্নে) শীতটা আসে জুনের শুরুতেই – অনেকটা অনেক কোম্পানির
নতুন ফিনান্সিয়াল বছর শুরু করার মতো। বছরের ঠিক মাঝ বরাবর একটা ঠান্ডা আমদানিকারক
বৃষ্টি সপ্তাহ যায় আর ঠিক তারপরেই শুরু হয় জমাট ঠান্ডা। এই জমাট ঠান্ডা কতটা
ঠান্ডা তা আরও ভালভাবে বোঝা যায় যদি কপালগুনে কোন পাহাড়ি এলাকার কাছাকাছি থাকা হয়।
সবচে উদ্বিগ্নের ব্যাপার হয় যখন এর সাথে যোগ হয় ঝড়ো বাতাস। আহা কি সে বাতাস, একবার
যদি নাকমুখ দিয়ে ঢুকে তবে তা হাঁচি-সর্দির এক পরিনত ভার্সন হয়ে বের হবে।
আমার প্রতিদিন সকালে গাড়ি পার্কের পাশে ফেলে
ট্রেনে চেপে অফিসাভিমুখী হতে হয়, সাউদার্নক্রস
নামের একটা স্টেশন এ নামি – এটা মেলবোর্নের সবচেয়ে বড় নতুন আর্কিটেকচারে তৈরী
স্টেশন, দেখতে অনেকটা কমলাপুর
রেলস্টেশনের মতো – তবে বানানো স্টিলের ফ্রেম দিয়ে। কিন্তু কি এককারনে জানিনা,
এখানে গরমের দিনেও হিম হিম করা ঠান্ডা লাগে (আমার ধারনা এর #Roof Fluid
Dynamics এর জন্য) –
আর শীতের দিনের কথা আর নাইবা বললাম। সাধারন ঠান্ডাতেও হাড় কনকনে বাতাস কোন ফাকফোকড়
থেকে বইতে শুরু করে কে জানে।
প্রচুর বিষোদাগার শেষে এখন একটু ভাল দিকও বলি,
শীতকালের সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে হালকা রোদের আনাগোনা আর সকালের শিশির ভেঁজা -
ঘাস ঠিকরে বের হওয়া আলোর ঝলকানি। আমার বাসার সামনে নতুন করে ঘন ঘাস উঠেছে শীতের ঠিক
আগে আগে, সেই ঘাসে সারারাত একটু একটু করে শিশির জমে – সকালে যখন কাঁপতে কাঁপতে
বাসা থেকে বের হই, তখন চোখের কোনায় জমে থাকা অশ্রুবিন্দুর মতো ঘাসের শীষে জমে থাকা
শিশির দেখি – আর সাথে সাথে মনটা মুহূর্ত ভাললাগায় ভরে যায়। তাই আমি আমার সন্তানকে
বলে যাব, খেয়াল রেখ আমার শেষ শয়নের উপর যাতে সবুজ ঘাস থাকে আর থাকে যাতে শীতের
সকালের ভালবাসার শিশির – যার অনুভবে বুঝতে পারবে কতটা স্বম্প সময় নিয়ে আমাদের এই
পৃথিবীতে আসা, আর কতটা ভালবাসা নিয়ে আমাদের সময় আঁকড়ে ধরার নাজুক চেষ্টা ...।