প্রতি জানুয়ারী মাস শুরু হবার আগে ও পরে এক ধরনের
অস্বস্তি কাজ করে। আগের অস্বস্তি হলো – “ধুর আবার একটা বছর জীবন থেকে নাই হয়ে গেল
- রং চং হীন, নিরস-নির্জীব”। আর পরের অস্বস্তি হলো – “আবার আরেকটা বছর, কেমন জানি
ভয় ধরানো অনুভূতি, না জানি কপালে কি আছে!”। এই আগে-পরের গ্যারাকলে পড়ে আমার কখনই
আলাদা করে নতুন বছর শুরুর আনন্দ করা হয় না।
আমি যে রসকসহীন মানুষ এটা আমার কাছের মানুষজন খুব
ভালভাবে জানে; নিজের মধ্যে থাকার তীব্র প্রবনতা কখনই ভাংতে পারি নাই। তবুও মাঝে
সাঝে সহজ-সরল ব্যাপারগুলো আনন্দ দেয় – এই যেমন ছেলের সাথে বাবাময়তায় বন্ধু সাজা, বউয়ের
সাথে ছোট্ট ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, মানুষের কাজ-কারবার নিরব ভাবে
পর্যবেক্ষন করা, দেশের ছেলেদের ক্রিকেট খেলা দেখা, হাবিজাবি। এর মাঝে কেউ যদি আমাকে
বলে – ‘বিভূঁয়ের কি ভাল লাগে?’ এক্ষেত্রে আমার কাছে অনেকক্ষেত্রে উত্তর নেই, আবার
কিছুর উত্তরও আছে। কিছু দেশি মানুষের এই দূর বিভূঁই খুবই ভাল লাগে, এমনকি নিজ
দেশের থেকেও বেশি। তাদের কথা বার্তা শুনলে মাঝে মাঝে আমার কাছে বিষের মতো লাগে;
কিন্তু আমি স্বভাবজাত নিয়মে কিছুই বলি না – মুখ তেতো করে বসে থাকি।
২০১৩ সালে আমি হুট করেই মেলবোর্নে কাঠ-পাকা বাড়ি
বানানোর সিদ্ধান্ত নেই; কাঠ-পাকা বললাম, কারন এখানকার বাড়িগূলার মধ্যে কাঠের
আধিক্য বেশি (ফাঁপা ইটের মাঝে কাঠ)। আমি খেয়াল করেছি বড় বড় সিদ্ধান্তগুলি আমি হুট
করে নেই, লম্বা সময় চিন্তা করে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর থেকে, কম সময় ধরে নেওয়া
সিদ্ধান্তগুলো ভাল হয়। বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত যতটা তাড়াতাড়ি নিয়েছি, সম্পর্কিত কিছু
ছোট-খাট কাজের সিদ্ধান্তগুলা একদমই তাড়াতাড়ি নিতে পারছি না। যতই
ভাবনা-চিন্তা-আলাপের মধ্যে যাচ্ছি; ততই মনে হচ্ছে, এই বুঝি কাজের যতি পড়বে।
আগামী বছর (২০১৫) মেলবোর্নে বাংলাদেশ টি২০-র
বিশ্বকাপে একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে আসবে; আগ বাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করে রাখলাম। জানিনা
টিকেট পাব কিনা, তবুও কেন জানি অযথা চিন্তা করে যাচ্ছি। সবচেয়ে মজার কথা হলো,
এমসিজি বাসার কত কাছে – অথচ ১৭৫ বছরের পুরোনো এই ক্লাব মাঠে এখনও যাই যাই করেও কেন
জানি যাওয়া হয় নাই।
জীবনে কতকিছু এভাবে করা হয় নাই, হবেও না – এটা চলতেই
থাকবে; ভাববো এই বছর না, পরের বছর করব – আশায় থাকি, আশাতেই থাকি, করা আর হয় না। এভাবে
একটা সময় জীবনের শেষ বছরটা আসবে, শেষ বেলাটা আসবে, আসবে শেষটুকু সন্ধ্যা – আমি আশাতে
থাকব শেষ সন্ধ্যার সোনালি সূর্্যের শেষ আভাটা দেখার – হয়তো দেখাই হবে না, আবার হয়তো
সবই হবে।