সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১২

আত্নকথন (বৃষ্টি )

বাইরে আকাশের তর্জন-গর্জন চলছে আকাশ ভাঙ্গবে বলে; অস্ট্রেলিয়ায় সাধারনতঃ ঝুম বৃষ্টি হয় না – এই আসে আর এই যায়। ছন্নছাড়া বৃষ্টি বলা যায়। এখানে থাকাতে এই হুটহাট বৃষ্টির মাঝে বেশ কয়েকবারই পড়তে হয়েছে; আর সাথে শিখতে হয়েছে কিভাবে ঝেড়ে দৌড় দিতে হয়। বাংলাদেশে থাকতে হালকা বৃষ্টির দমকা হাওয়াটা অসাধারন লাগতো। এইখানে পলকা বৃষ্টির সাথে কনকনে ঠান্ডা দমকা হাওয়াটা বিষের মতো মনে হয়। প্রচন্ড শীত আর বৃষ্টির বায়বীয় আবেশ তখন মিলেমিশে একাকার হয়ে শরীরে কাঁটা তুলে জানান দেয়।

আমার মনে আছে দেশে থাকতে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি পড়তো, তখন কেন জানি আমার খুব আনন্দ লাগতো। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগতো বাসার সামনের খোলা মাঠটার সবুজ ঘাসগুলো - যা বৃষ্টির পানিতে ক্রমাগত ভিজে ঝা ঝা সবুজাভ হয়ে উঠতো। বেশিরভাগ সময় আমি আমার রুমের সামনের বারান্দায় একটা শক্ত কাঠের চেয়ারে বসে থাকতাম; শক্ত চেয়ারে আলতো হয়ে বসে বৃষ্টিবিলাসে মন মাতিয়ে তুলতাম। এখনো মনে পড়ে কত্তো কথা একা একা বলতাম। কথার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবার তীব্র বাসনাটা আজ অব্দি গেল না।

মনে আছে মাথার চুল ভেঁজা, শরীর ভেঁজা – তবুও শুধু ভাললাগার জন্য কত বৃষ্টির মাঝে হেঁটেছি। ধানমন্ডির চেনা অচেনা গলি পেরিয়ে শুধু ভাললাগাকে সম্বল করে আমার হাঁটা চলতে থাকতো। আর সেই আমি আজ বৃষ্টি থেকে পালাতে ঝেড়ে দৌড় দেই। সময়টা বোধহয় এভাবেই পাল্টায়।

আমার বিশাল রুমে সাতটা কাঁচের জানালা ছিল, মনে আছে যখন কালো আকাশে বিদ্যুত চমকাতো – মনে হতো হাজার ভোল্টের আলো জ্বলে উঠেছে সাত জানালার পাশে; ধবধব করছে জানালার কাঁচগুলো। আমি ভীষন চমকে উঠতাম, কারন কিছুদিন আগেই জানালার পাশের সজনে গাছটা বজ্রাহত হয়েছিল। আহা, আজ আর চমকে উঠি না, ঘুমের মাঝে ছেলেকে বরং জাপটে ধরি - যাতে ও না চমকায়।

রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

ছদ্দ

নিজের কিছু ছন্নছাড়া পংক্তি দিলাম এখানে; সময়-অসময়ে ছদ্দ মিলিয়ে পদ্য বানানোর বৃথা চেষ্টাঃ 

১। সময়ের টাইমলাইন ঃ 

শুন্য অদ্ভূতুড়ে আবেগ, জানিনা কার জন্যে,
     জানি শুধু সময় জানে
সময় বলবে কোন এক সময়ে আমায়
     এই তো সেই, যার অপেক্ষায় তুমি।
সবাই মোরা সেই সময়ের প্রতীক্ষায়
     এ সময় যেন আর থমকে না দাড়ায়। 

২। দেশের জন্য যখন নিজের ভেতরটায় হুহু করেঃ 

এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে, সময় কাটে ফুরফুরিয়ে
দিনের শেষে ফিরে দেখি মনটা নিরুদ্বেশ,
মনের ভিতর ধুধু করে, হা হা বাড়ে তরতরিয়ে
ফিরব কবে তোমার কাছে, আমার ছোট্ট দেশ।

৩। নিজের বাড়ন্ত বয়স নিয়ে উদ্বিগ্ন যখনঃ

গল্প হল শুরু, শেষটা কবে গুরু
এমনি করেই চলতে চলতেই হচ্ছি কেবল বুড়ো।

৪। আমার অর্ধাঙ্গিনী যখন চলন্ত গাড়ি থেকে মাইক্রো সাইজের টিস্যু ফেলে লিটারিঙ্গের ফাইন খায়ঃ 

শুভংকরের পুলিশ, বানিয়ে ছাড়ল ফুলিশ ...
বলে দিনে দুপুরে কি যা তা ফেলিস!




মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

দিনাতিপাত-৯

বাসার সামনে বড় বড় বিশাল দুইটা গাছ আছে, গাছ দুইটার নাম জানি না। কারন গাছ আমার ভাল লাগে কিন্তু কোনটা কি গাছ এই সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুন্য থেকেও কম। আসলে আমার ধারনা সব কিছু নিয়ে ছোঁকছোঁক জ্ঞান থাকলে মাথায় চাপ পড়ে এবং চাপের কারনে সাধারন যাপিত জীবন যাপন ব্যহিত হয়। এই ধারনায় জীবন দর্শন চালাতে গিয়ে জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এখন দেখি দুয়েকটা বিষয় বাদে অন্যান্য বিষয়ে আমার কোন ধারনাই নেই। মোটামুটি বলা চলে ধারনাহীন জীবন চালাচ্ছি এখন।

ধারনাহীন জীবন যাপনের অনেক উদারন দেয়া যায়। এখন যেমন অনেকটা বিরক্ত হয়েই ব্লগিং করছি। অনেকক্ষন ধরে একটা নতুন কাজ বোঝার চেষ্টা করে মাথা ঝিমঝিম করছে। একদম ধারনার বাইরে আমার এই নতুন কাজ – অনেকটা নভিসের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে।

আজকে খানিকটা মাথা ব্যাথা করছে, চোখ দেখিয়েছি কয়েকদিন আগে – চোখের সমস্যা নেই; ঘুমেরও সমস্যা নেই; তাহলে মাথাটার ব্যাথিত হবার কারন টা কি – ধারনা করতে পারছি না।

অফিসে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ কাজ করে। একেকজনের ব্যবহারে বিস্তর ফারাক – কেউ কিছুতেই মহা বিরক্ত আবার কারও সারাক্ষন হাসি হাসি মুখ। আমার এই দুটোতেই বিশাল এলার্জি আছে। আমি অতিরিক্ত অভিব্যক্তি দেখানোকে কেন জানি পছন্দ করি না। এর অন্যতম কারন আমি একদমই ধারনা করতে পারি না মানুষটার অতিরিক্ত অভিব্যক্তি দেখানোর কারন।

এইখানে রাস্তায় অনেক মানুষ দেখি – বিভিন্ন দেশের মানুষ গাদাগাদি করে সকালে বাসে-ট্রামে-ট্রেনে চলাফেরা করে। বিচিত্র এদের চেহারা, পোষাক, চালচলন। তবে একটা জিনিষ সবার জন্য একই – তা হলো নিয়ম। এইখানে নিয়মের বাইরে মানুষকে যেতে দেয়া হয় না এবং মানুষ চেষ্টাও খুব একটা করে না। নিজের দেশে সবাই এমনি করে খানিকটা নিয়ম মেনে চললে যে অনেক সুন্দরভাবে চলাফেরা করা যায় – এই ব্যাপারটা কাউকে বললে... – বলবে এইটা অসম্ভব, কারন তা ধারনারও অতীত। ঃ(