বাইরে আকাশের
তর্জন-গর্জন চলছে আকাশ ভাঙ্গবে বলে; অস্ট্রেলিয়ায় সাধারনতঃ ঝুম বৃষ্টি হয় না – এই
আসে আর এই যায়। ছন্নছাড়া বৃষ্টি বলা যায়। এখানে থাকাতে এই হুটহাট বৃষ্টির মাঝে বেশ
কয়েকবারই পড়তে হয়েছে; আর সাথে শিখতে হয়েছে কিভাবে ঝেড়ে দৌড় দিতে হয়। বাংলাদেশে
থাকতে হালকা বৃষ্টির দমকা হাওয়াটা অসাধারন লাগতো। এইখানে পলকা বৃষ্টির সাথে কনকনে
ঠান্ডা দমকা হাওয়াটা বিষের মতো মনে হয়। প্রচন্ড শীত আর বৃষ্টির বায়বীয় আবেশ তখন
মিলেমিশে একাকার হয়ে শরীরে কাঁটা তুলে জানান দেয়।
আমার মনে আছে দেশে
থাকতে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি পড়তো, তখন কেন জানি আমার খুব আনন্দ লাগতো। সবচেয়ে
বেশি ভাল লাগতো বাসার সামনের খোলা মাঠটার সবুজ ঘাসগুলো - যা বৃষ্টির পানিতে ক্রমাগত
ভিজে ঝা ঝা সবুজাভ হয়ে উঠতো। বেশিরভাগ সময় আমি আমার রুমের সামনের বারান্দায় একটা
শক্ত কাঠের চেয়ারে বসে থাকতাম; শক্ত চেয়ারে আলতো হয়ে বসে বৃষ্টিবিলাসে মন মাতিয়ে
তুলতাম। এখনো মনে পড়ে কত্তো কথা একা একা বলতাম। কথার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবার
তীব্র বাসনাটা আজ অব্দি গেল না।
মনে আছে মাথার চুল
ভেঁজা, শরীর ভেঁজা – তবুও শুধু ভাললাগার জন্য কত বৃষ্টির মাঝে হেঁটেছি। ধানমন্ডির
চেনা অচেনা গলি পেরিয়ে শুধু ভাললাগাকে সম্বল করে আমার হাঁটা চলতে থাকতো। আর সেই
আমি আজ বৃষ্টি থেকে পালাতে ঝেড়ে দৌড় দেই। সময়টা বোধহয় এভাবেই পাল্টায়।
আমার বিশাল রুমে
সাতটা কাঁচের জানালা ছিল, মনে আছে যখন কালো আকাশে বিদ্যুত চমকাতো – মনে হতো হাজার ভোল্টের আলো
জ্বলে উঠেছে সাত জানালার পাশে; ধবধব করছে জানালার কাঁচগুলো। আমি ভীষন চমকে উঠতাম,
কারন কিছুদিন আগেই জানালার পাশের সজনে গাছটা বজ্রাহত হয়েছিল। আহা, আজ আর চমকে উঠি
না, ঘুমের মাঝে ছেলেকে বরং জাপটে ধরি - যাতে ও না চমকায়।