বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০১১

দিনাতিপাত-৫

আমি যখন অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেই তখন মোটামুটি ৭টা বাজে; ঘুম থেকে উঠি ৬ টার একটু পরে (যদিও আইপডে আলার্ম দেয়া থাকে সকাল ৬টায়)। এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করতে কারই বা ভাল লাগে? তবুও বিদেশ বলে কথা, চাইলেই একটু ফাঁকি দিয়ে দেরি করে অফিস যাওয়া যায় না। আমার মেলবোর্নের নিবাসটা কাজের জায়গা থেকে একটু দূরেই হয়ে গেছে, কারন খুব কম সময়ে বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আর যেসব বাসা পছন্দ হয় সেগুলো রিয়েল এস্টেট কোম্পানি দেয় না (না দেয়ার পিছনে অবশ্য আমি যেটা বুঝেছি তা হলো এখানে আমার এখনো history তৈরী হয় নাই যা ভাল বাসার পাবার জন্য অতি দরকারী)।  

যা বলছিলাম! বাংলাদেশে খুব কম ঠান্ডাতেও বেশি শীত লাগতো আর এইখানে তো আসলেই অনেক ঠান্ডা পরে তার উপর রয়েছে হাড় কাপানো কনকনে ঠান্ডা বাতাস। এই বাতাসের প্রকোপ যখন গায়ে লাগে তখন গলা ব্যাথা সাথে সাথে শুরু হয়ে যায়। আর প্রতিদিন এই হিম করা বাতাস উপেক্ষা করে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকি তীর্থের কাকের মতো। তখন খালি মনে হয় – ভাগ্য ভাল কানাডায় যাই নাই...তাহলে আর আমাকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। আমার সকল আশা ধন্য করে বাস খানা যখন আসে, তখন খুব সরল আনন্দ হয়, এ আনন্দের কোন প্রকৃতি নাই, এটা এমনি এমনি হয়। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ট্রেন স্টেশনের সামনে নেমে আবারও ঠান্ডা প্রকৃতিকে কাঁচ কলা দেখিয়ে ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকি... এবার আশায় থাকি যদি কোনরকমে একটা বসার জায়গা পাওয়া যায়। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে আমার আশা পূর্ন হয় না, বরং আজকে যা হলো তাতো ভয়াবহ – দাঁড়ানো অবস্থায় কোথাও ধরতেও পারছিলাম না, ট্রেনের বাঁকের সাথে সাথে আমিও এদিক সেদিক বেঁকে যাচ্ছিলাম। সিডনি-মেলবোর্নে অফিস সময়ে শহর অভিমুখি ট্রেনগুলার বগিগুলা দেখলে মনে হবে আমাদের দেশের ৬ নাম্বার বাসের পরিবেশ থেকে কোন অংশে কম না। এরই মধ্যে অতি আনন্দে হাতল ধরার একটা জায়গা পেলাম এবং খপ করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বুঝলাম এখানেও একটা ঝামেলা আছে – আমার হাতটা এক প্রেমিক যুগল কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে যেন; আমিও কোন বিকার না দেখিয়ে চুপকরে ধরে রইলাম হাতল। কিন্তু বিধিবাম – একটু পরেই প্রেমিক যুগলের ভাব বিনিময় শুরু হলো ওষ্ঠ-অধরের মাখামাখিতে, আর আমি অনুভব করলাম যে আমার হাত আর কোনভাবেই প্রেমকে ব্যরিকেড দিতে পারছে না। আমি হাত সরিয়ে আবার আঁকা বাঁকা ভঙ্গিতে নিজের ভার ঠিক রাখতে থাকি।
[মেলবোর্ন  ট্রেন,  সূত্রঃ অর্ন্তজাল]

২টি মন্তব্য:

  1. হাত দিয়ে ব্যরিকেড না দিয়ে ওষ্ঠ-অধর দিয়ে ট্রাই করলে মনে হয় কাজ হত। :)

    উত্তরমুছুন
  2. প্রেমকে তো আর ব্যরিকেড দেয়া যায় না, আর এমন দেশে বেমানান আমরা সহজ ভালবাসা প্রকাশ দেখেও কৃষ্টিগত কারনে অস্বস্তিতে ভুগি, এ যে আমাদেরই ব্যর্থতা।

    ওরা বন্যাধারায় পথ যে হারায়
    উদ্দাম চঞ্চল ।।
    ওরা কেনই আসে যায় বা চলে, অকারণের হাওয়ায় দোলে–
    চিহ্ন কিছুই যায় না রেখে, পায় না কোনো ফল ।।
    -- রবীন্দ্রনাথ (প্রেম)

    উত্তরমুছুন