বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আত্নকথন (ক্ষন)

প্রায়ই মনের ভিতর থেকে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস বের হয়; মনে হয় নিজেকে বড্ড ক্লান্ত --এ মনের ক্লান্তি ।আমি ক্লান্ত শ্রান্ত মন নিয়ে নিজেকে আর দেখি না, দেখি ফেলে আসা চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিকেষ। তারপর একটা সময় আবার ফিরে আসি সহজ পৃথিবীতে -- হয়তো এভাবে হারিয়ে যাওয়াতেই আমার আনন্দ। 

আমার জীবনের বড্ড বেশি সময় কেটেছে ভাব আর আবেগের সংমিশ্রনে নিজেকে খুঁজে ফিরতে ফিরতে। সেই যে কবে নিজেকে খোঁজা শুরু হয়েছিল, তা আজও চলছে...হয়তো চলবে জীবনের শেষক্ষন পর্যন্ত। তবে এই খুঁজতে গিয়ে নিজেকে অনেক ভাবে চিনেছি; চিনেছি ভাংগা-গড়া, পার্থিব বা অপার্থিবের পার্থক্য। জীবনে একদিকে পেয়েছি ভালবাসার আনন্দ, অন্যদিকে হারিয়েছি কত ভাললাগার ক্ষন। সময় যেভাবে দিয়েছে, সেভাবেই কেড়ে নিয়েছে, হয়তো আরও নিবে-দিবে। তবুও দিন শেষে মনটাকে হারিয়ে বসি,  বিকেলের শেষ রাঙ্গা রোদকে দেখার মুগ্ধতায় বারবার আক্রান্ত হই; ভেবে বসে থাকি একটা ক্ষনের জন্য, শুধু একটা ক্ষন ... ...।

রবির এই গান টা শুনেই যাচ্ছিঃ স্বপন দোহে চিনু কি মোহে //






বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আত্নকথন (আশ্রয়)

হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথ পড়া শুরু করলাম; আসলে ফেলে আসা এ জীবনে রবীন্দ্র রচনাবলী পড়ব পড়ব করেও কেন জানি পড়া হয়ে উঠে নাই। ছোট বেলায় বাসা থেকে গান শিখতে বা'ফা তে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে রবীন্দ্রসংগীতের কিছুটা হাতে খড়ি হয়েছিল সাথে আমার বোন যখন গাইতো হারমোনিয়াম খুলে, আমিও বুঝে না বুঝে সুর তুলতাম। ছোট্ট বেলার কচি কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত বাজত, কেন জানি একটা আলাদা আনন্দ কাজ করতো। যদিও এতো আগের অনুভূতি মনে থাকার কথা না।  


আমার জীবনে যেমন অনেক কিছুই ঘটা করে শুরু করে শেষ করা হয় না, তেমনি গানটাও ধরে রাখতে পারিনি। তবে গলার সাথে তখন মেলবন্ধন করে আবৃত্তির। কলেজ, ইঊনি-র সময়গুলো কাঁচা-পাকা আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে সময় চলে গেল -- সাথে কবিতার প্রতি, বিশেষ করে অনুভূতির প্রতি মায়া জন্মালো। বিষন্ন বা আনন্দদায়ক যাই হোক না কেন -- আমার ভাল লাগতো (এখনও লাগে) আবৃত্তির মতো করে অনুভুতির কথার মায়া ছড়াতে নিজের সাথেই। এটা যেন আপন সত্ত্বার সাথে কথোপকথন। 

মনের খেয়ালে নিজের সাথে নিজের এই কথা বলা আমার বহুকাল চলেছে; এই যেমনঃ বারাব্দায় কাঠের চেয়ারে বসে ঝমঝম করে বিরামহীন বৃষ্টিতে সামনের মাঠটার ভেসে যাওয়া দেখা, সাথে নিজের সত্ত্বার সাথে আত্নকথনে মেতে উঠা। আবার কখনো ঘর অন্ধকার করে জানালার পাশে বসে মেঘহীন আকাশে ঝুলে থাকা চাঁদের আকৃতি মাপা, আর বলা ভিতরের কথা সবই কবিতার ছন্দ ধার করে।

এই অসময়ে বিদেশের মাটিতে তাই হয়তো রবিঠাকুর আবার আমার মনে ভর করেছে কোন এক মনের টানে, ভাললাগার টানে। আমি তাই শুরু করলাম একদম শুরু থেকে; কিছুই আর বাদ দেব না। মনটাকে চেনার জন্য রবীন্দ্রনাথের আশ্রয়ে ফেরা ছাড়া আসলেই আর হয়তো কেউ নেই।


"গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
তখন তারে চিনি আমি,   তখন তারে জানি।
তখন তারি আলোর ভাষায়  আকাশ ভরে ভালোবাসায়,
তখন তারি ধুলায় ধুলায় জাগে পরম বাণী।।
তখন সে যে বাহির ছেড়ে অন্তরে মোর আসে,
তখন আমার হৃদয় কাঁপে তারি ঘাসে ঘাসে।
রূপের রেখা রসের ধারায়   আপন সীমা কোথায় হারায়,
তখন দেখি আমার সাথে সবার কানাকানি।"
- গান-২৬, পুজো (রবীন্দ্রনাথ)




[রবীন্দ্র রচনাবলীঃ http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/2 ]

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

মেলবোর্ন সময় ...

মেলবোর্ন এ এসেই প্রথম যা চোখ ভরে দেখলাম তা হলো একর একর খালি জমি।Avalon Domestic বিমানবন্দর থেকে নেমে বাইরে বেরোতেই সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগল; সন্ধ্যা তখন প্রায় শেষের পথে। একা একা যখন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, তখন সামনে থেমে থাকা বাসের কোম্পানির একজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাব, বাসে যাব কিনা? জানালাম, বন্ধু আসবে গাড়ি নিয়ে। লোকটা হাসি নিয়ে বিদায় নিল। হুট করে মনে হল, সিডনিতে গায়ে পড়ে খোঁজ নিতে কেইবা আসবে!? তাহলে কি মেলবোর্নটা অন্যরকম?

তারপর থেকে অন্যরকমের আমেজ বেশ কয়েক জায়গায় পাওয়া গেল -- বাসে চড়ে, ট্রেনের মানুষের হাসি মুখ দেখে, অফিসের সবার - সেধে পরিচিত হবার উদযোগে এমনি করে বিভিন্ন পরিবেশে। সবচেয়ে ভাল লাগলো মানুষজন এখানে হাসতে পারে, সিডনির মতো মুখ ভার করে থাকে না। হয়তো সিডনিতে কাজের চাপে সবাই চ্যাপ্টা গোলাপের মতো হয়ে থাকে -- এটা কারন হতে পারে।

তবে এখানে এসে আমি একটু বিপদেই পড়ে যাই, কারন বাসে বা ট্রামে উঠার কোন অভ্যাস করতে হয় নাই সিডনিতে থাকাকালীন; বিশেষ করে ট্রামে চড়াটা। ট্রামগুলা এত কাছাকাছি গাড়ির রাস্তা ধরে চলে যে রাস্তায় নামলে গাড়ি, সিগন্যাল সাথে ট্রাম তিনটাই খেয়াল করতে হয়। তবে এখানের রাস্তা বা ফুটপাথগুলো বেশ প্রশস্ত; মোটামুটি হেলেদুলে চলতে খুব একটা সমস্যা হয় না।

আমি এখানে বাসা নিয়েছি পশ্চিমের দিকে, শহর ছাড়িয়ে বলা চলে গ্রামে। এবং এটা যে গ্রাম এ কথাটা স্পষ্ট ভাবে নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এমনিতেই মেলবোর্ন খুব শান্ত, তার উপর এ এলাকাটা অতি মাত্রায় শান্ত। প্রথম দিকে তো কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছিল। ঢাকা শহরের অতি মাত্রার শব্দ দূষন থেকে ধুম করে অতি নিরব এলাকায় পরে ভিষন অস্বস্তি লাগছিল। সপ্তাহ খানেক যাবার পর এখন ঠিক হয়েছে।

পরিবেশের সাথে ক্ষনেক্ষনে অভিযোজিত হচ্ছি, দেখছি সময়ের বদলে যাওয়া। ভাল লাগছে আবার মনে হচ্ছে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার পুরোনো হতে থাকা সময় গুলো। সময়ের সাময়িকতায় কোথায় দাঁড়াই, সময়ই বলে দিবে ...

সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

গানের ওপারে

গতকাল রাত থেকেগানের ওপারে’ নামের একটা সিরিয়াল একটানা youtube দেখলাম শুরুতে দেখার কোন উদ্দেশ্য ছিল না, শুধুই দেখা কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেখলাম ভালই লাগে, বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতের নতুন আর পরিচিত সুরের বৈপরীত্য। কাহিনীর বিন্যাস বা অভিনয় থেকে নিজের আকর্ষন বেড়ে গেল - পরিবেশের সাথে রবীন্দ্রসংগীতের মিলে যাওয়াটা দেখে। ভাল লাগাটা কাজ করল যখন দেখলাম এই নতুন নতুন সময়ে রবীন্দ্রনাথের সেই রেখে যাওয়া সুরের নতুন করে বিভিন্ন ভাবনার সংযোজন। সারাটা রাত দেখেও শেষ করতে না পেরে সকালের অনেকটা সময়ও দেখতে হলো; কিন্তু সুরের টানে একঘেয়েমিটা লাগলো না।

কাহিনীকার বা পরিচালক যত্ন সহকারে চরিত্রের নাম দিয়েছেন (যেমনঃ গোরা, পুপে); সহজ নামের এ যেন সহজিয়া ব্যবহার।আরও আছে বাড়ির নামের অলংকার ‘সোনার তরী’; রবীন্দ্রনাথের সাথে সম্পূর্ন মিশে যাওয়া একটা বাড়ির পরিবেশ। হয়তো আজকাল এইটা নাটকেই সম্ভব, কিন্তু আমার মনে ব্যাপারটা কেমন যেন একটা ভাললাগা তৈরী করে দিল।

পুরোটা কাহিনী জুড়ে আমার আরেকটা জিনিষ আকর্ষন করেছে, তা হলো, রবির সুরের ভাঙ্গা আর গড়া; যেন নতুন শতাব্দীতে পুরোনো রবিকে সাথে করে নতুন উদ্যোমে চলা।

মন ভাল-খারাপের সাথে সারা জীবন মিশে যাওয়া মনের ‘রবীন্দ্রসংগীত’, আমাদের যেমন পথ দেখায় তেমনি নতুন উদ্যোমে চলতেও শেখায়। আর ভাললাগার বোধটা হয়তো তাই সার্থক করেছে; এই শীতের সারারাত জেগে কাহীনিটার পথ চলা দেখায়। পূর্ন আশায় রইলাম, সামনে আরো কিছু গানের সার্থক পরিশুদ্ধ বিন্যাস দেখার।