বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আত্নকথন (আশ্রয়)

হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথ পড়া শুরু করলাম; আসলে ফেলে আসা এ জীবনে রবীন্দ্র রচনাবলী পড়ব পড়ব করেও কেন জানি পড়া হয়ে উঠে নাই। ছোট বেলায় বাসা থেকে গান শিখতে বা'ফা তে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে রবীন্দ্রসংগীতের কিছুটা হাতে খড়ি হয়েছিল সাথে আমার বোন যখন গাইতো হারমোনিয়াম খুলে, আমিও বুঝে না বুঝে সুর তুলতাম। ছোট্ট বেলার কচি কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত বাজত, কেন জানি একটা আলাদা আনন্দ কাজ করতো। যদিও এতো আগের অনুভূতি মনে থাকার কথা না।  


আমার জীবনে যেমন অনেক কিছুই ঘটা করে শুরু করে শেষ করা হয় না, তেমনি গানটাও ধরে রাখতে পারিনি। তবে গলার সাথে তখন মেলবন্ধন করে আবৃত্তির। কলেজ, ইঊনি-র সময়গুলো কাঁচা-পাকা আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে সময় চলে গেল -- সাথে কবিতার প্রতি, বিশেষ করে অনুভূতির প্রতি মায়া জন্মালো। বিষন্ন বা আনন্দদায়ক যাই হোক না কেন -- আমার ভাল লাগতো (এখনও লাগে) আবৃত্তির মতো করে অনুভুতির কথার মায়া ছড়াতে নিজের সাথেই। এটা যেন আপন সত্ত্বার সাথে কথোপকথন। 

মনের খেয়ালে নিজের সাথে নিজের এই কথা বলা আমার বহুকাল চলেছে; এই যেমনঃ বারাব্দায় কাঠের চেয়ারে বসে ঝমঝম করে বিরামহীন বৃষ্টিতে সামনের মাঠটার ভেসে যাওয়া দেখা, সাথে নিজের সত্ত্বার সাথে আত্নকথনে মেতে উঠা। আবার কখনো ঘর অন্ধকার করে জানালার পাশে বসে মেঘহীন আকাশে ঝুলে থাকা চাঁদের আকৃতি মাপা, আর বলা ভিতরের কথা সবই কবিতার ছন্দ ধার করে।

এই অসময়ে বিদেশের মাটিতে তাই হয়তো রবিঠাকুর আবার আমার মনে ভর করেছে কোন এক মনের টানে, ভাললাগার টানে। আমি তাই শুরু করলাম একদম শুরু থেকে; কিছুই আর বাদ দেব না। মনটাকে চেনার জন্য রবীন্দ্রনাথের আশ্রয়ে ফেরা ছাড়া আসলেই আর হয়তো কেউ নেই।


"গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
তখন তারে চিনি আমি,   তখন তারে জানি।
তখন তারি আলোর ভাষায়  আকাশ ভরে ভালোবাসায়,
তখন তারি ধুলায় ধুলায় জাগে পরম বাণী।।
তখন সে যে বাহির ছেড়ে অন্তরে মোর আসে,
তখন আমার হৃদয় কাঁপে তারি ঘাসে ঘাসে।
রূপের রেখা রসের ধারায়   আপন সীমা কোথায় হারায়,
তখন দেখি আমার সাথে সবার কানাকানি।"
- গান-২৬, পুজো (রবীন্দ্রনাথ)




[রবীন্দ্র রচনাবলীঃ http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/2 ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন