শনিবার, ২২ মে, ২০১০

কথন


আমার ছেলে কথন, এই বছরের ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখে জীবনের প্রথম বছরে পদার্পণ করে। ছেলেটার প্রতি মুহূর্তে বেড়ে উঠা আমি উপভোগ করি। ছেলের প্রতি বাবার যে বাবাময়তা প্রতি মুহূর্তে কাজ করে, তা আমি প্রতিটা সময় টের পাই।
ছেলেটা যখন পৃথিবীতে এসে কয়েক মিনিটের মাথায় তার বাবার দিকে না তাকিয়ে চারপাশের সম্পূর্ণ পৃথিবীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল; আর সেই তখন আমি, ‘চারপাশের সম্পূর্ণ পৃথিবী’ ফেলে আমার বিস্ময়ভরা চোখে ছোট্ট শিশুটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি অবাক করা চোখে ছেলের কপাল ছুয়ে যাওয়া সোজা সোজা চুল, বড় বড় চোখ, ছোট্ট নাকের পরে গোলাপী দুটো ঠোট – আমার সকল ভাললাগায় ছুয়ে গিয়েছিল।আমার বাবা আমারই পাশে দাড়িয়ে তার নাতিটার কানে আওয়াজ দিচ্ছিল আযান দিয়ে। আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ প্রচণ্ড ভাললাগা নিয়ে তাকিয়ে ছিল আমার সন্তানের দিকে। সে যে কি আনন্দ আমার হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছিল প্রতিক্ষনে, তা কেবল বাবারাই অনুভব করতে পারে।
ছেলে এখন ভালই হাটে, ঘুম থেকে উঠে প্রথমে একটা স্বর্গীয় হাসি দেবে বাবা-মার দিকে আর তারপরই বুক-পেট লাগিয়ে খাট থেকে ধাম করে নেমে পড়ে। এবং সেই যে হাঁটা শুরু হবে তা শেষ হবে রাতে ঘুমানোর আগে। সাথে তার একজন থাকতে হয়, নয়তো দুলকি চালে হাঁটতে গিয়ে, কখন যে কোথায় পড়ে তার ঠিক নাই। এইতো সেদিন হাতে টান খেলো, অফিস থেকে আসা মাত্র দেখি এই কাহিনী। তারাতারি ডাক্তারের কাছে গেলাম। আল্লাহ্র রহমতে একদিন পরেই ঠিক হয়ে গেলো। এরকম বিভিন্ন কাহিনী নিয়েই এখন তাকে নিয়ে সদা ব্যাস্ত। তবে এতে মনের আনন্দটা সব সময়ই তাকেই ঘিরে থাকে।
কথনের দাত উঠেছে ৮ টা, তাও আবার একমাসেই প্রায় ৬ টা দাত উঠেছে। দাত উঠার পর, দুনিয়ার তাবৎ জিনিষ তার খাদ্য বলে তার বিবেচনায় আসে। নিজের হাত, পা থেকে শুরু করে টেবিল, চেয়ার কিছুই বাদ যায় না। আমি এবং বাসার অন্যেরা সবাই মিলে চরম আশান্ত হয়ে তাকে বিভিন্ন ছলে-বলে কৌশলে আটকানোর চেষ্টা করি কিন্তু তার অধ্যবসায় থেকে তাকে দূরে সরানো দায়।
8
আমি আর আমার স্ত্রী দুজনই চাকুরী করি, কথনের ৪০ দিন হওয়ার পর থেকেই আমার সহধর্মিনী অফিস যাওয়া শুরু করে| বাসায় কথনের দাদী বা নানীর থাকতে হয় তার পরিচর্যার জন্য| এটা একটা মহা ঝামেলা, কারন আমি শুরু থেকেই আলাদা থাকি অফিসের কাছাকাছি এলাকায়, যাতায়াত সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য; অন্যদিকে ছুটির পার্থক্যের কারনে শুক্রবার আমি রাখি বাচ্চাকে, আর শনিবার দুজনই বাসায়, রোববার আবার বাবুর মা রাখে কথনকে। তবে শুক্রবার রাখতে গিয়ে আমার আর নামা্য পড়াটা আর হয়ে উঠে না। তবে বাপ-বেটার সময়টা বেশ ভালই কাটে; ছোটখাট খুনসুটি থেকে শুরু করে, মারামারি, নাচানাচি কিছুই বাদ যায় না। ছেলের সমস্যা হলো সে একই জিনিষে খুব বেশী আগ্রহ পায় না, তাই আমাদের ক্রমাগত তার খেলার জিনিষ বদলে দিতে হয়। জিনিষ বদলাতে গিয়ে নিত্য ব্যবহার্য হেন জিনিষ নাই যা তাকে দিতে হয় না। খুবই কম সময় নিয়ে সে পরিবর্তিত জিনিষটার সাথে খেলবে, তারপর ছুড়ে ফেলে দিবে।
একদিন খোমাখাতায় লিখেছিলাম, “বাচ্চা যে এতো জ্বালায় সে সম্পর্কে আমার কখনোই ধারণা ছিল না”। 
কারন সারারাত ব্যাপক জ্বালাতন করে সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার একটু আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। আসলে আমাদের সারাটা দিন দেখতে না পেয়ে তার মনটা অনেক খারাপ হয়। আমাদের মনটাও অস্থির হয়ে উঠে বাবুটাকে কাছে পাবার জন্য। আসলে সংসারের প্রবাহমানতায়, বিভিন্ন দিক মিলাতে গিয়ে বিভিন্ন মানষিক প্রশান্তি কখনই মিলানো যায় না। আর সেই সাথে আমরা সবাই ভাল থাকার ক্রমাগত চেষ্টায় প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হই।তবে তবুও শেষ পর্যন্ত বলি ভাল আছি।

২টি মন্তব্য:

  1. আপনার লেখা গুলোর মধ্যে , আমার জীবনের অনেক মিল খুঁজে পেলাম..
    অনেক আদর রইলো আপনার মানিকের প্রতি..

    উত্তরমুছুন
  2. আরও একটি বছর বাড়ল ছেলেটার আজ, সময় দ্রূত এগিয়ে নিচ্ছে জীবনটাকে। শুভ জন্মদিন 'কথন' বাবাটা।

    উত্তরমুছুন